আরেফিন লিমন (গলাচিপা,পটুয়াখালী)
ঘাট ইজারা নিয়ে দূর্নীতির মামলায় পটুয়াখালীর গলাচিপা গোলখালী (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে জেলা জজ আদালত। একই সঙ্গে ঘাট ইজারাদার খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে। পরোয়ানা জারির খবরে গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রোখসানা পারভিন এ আদেশ দেন। এরপর থেকেই পলাতক রয়েছেন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমান। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, একই স্থানে ভিন্ন খেয়াঘাট দেখিয়ে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে টাকার বিনিময়ে ঘাট ইজারা দেয়া। গোলখালী ইউনিয়নের বড়গাবুয়া খেয়াঘাটের প্রকৃত ইজারাদারের কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি। এছাড়া ৭ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে আরেক ইজারাদারকে খেয়াঘাট ইজারা দেয়া।
এসব ঘটনায় অভিযোগ তুলে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ ঘাটের প্রকৃত ইজারাদার রিয়াজ উদ্দিন পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুর্নীতি দমন আইনে নাসির ও খলিলুরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক পটুয়াখালী অফিসকে আদেশ দেন।
দুদক পটুয়াখালী অফিস অভিযোগ পত্রের ভিত্তিতে দুই বছর ধরে তদন্ত করে ঘটনার প্রমাণ পায়। এরপরেই চেয়ারম্যান নাসির ও খলিলুরের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পটুয়াখালী দুদকের সহকারী পরিচালক নাজমুল হুসাইন। ফলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
দুদকের অভিযোগপত্র হতে জানা যায়, পটুয়াখালীর গলাচিপা এবং বরগুনা জেলার আমতলীর মধ্যবর্তী নদী গোলখালী। এই নদীতে বড়গাবুয়া খেয়াঘাটটি আন্তজেলা খেয়াঘাট।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘাটটি ইজারা পান রিয়াজ মিয়া। তবে ৫ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন রিয়াজকে ইজারা প্রদানে বাধা দেন। একপর্যায়ে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে নাসির ৭ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগের স্থানেই বড়গাবুয়া টু বড়গাবুয়া লিখে খলিলুর রহমানকে ঘাট ইজারা দেন।
বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, সরকারি ইজারা প্রদান করা খেয়াঘাটের দুই মাইলের মধ্যে নতুন কোনো খেয়াঘাট সৃষ্টি বা নতুন নামে কোনো খেয়াঘাটের ইজারা দেয়ার বিধান স্থানীয় সরকার আইনের কোথাও নেই।
তবে আইন অমান্য করে চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষের বিনিময়ে একই স্থানে নতুন নাম দিয়ে ঘাটের ইজারা দেন।
এ বিষয়ে ঐ মামলার বাদী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান নাসিরের কারণে আমি আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। নানাভাবে হয়রানির শিকারও হয়েছি। আমাকে বারবার প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে। আমি ন্যায্য বিচারের জন্যই মামলা করেছি। আশা করি আদালত সঠিক বিচার করবে।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ও খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম আর সওকত আনোয়ার ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এখনও আদালতের কপি হাতে পাইনি। ওয়ারেন্টের কপি পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।