ঢাকাশুক্রবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
১৭ই চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ৩১শে মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নরসিংদীর বেলাবতে বসন্তের শুরুতেই ফুটেছে শিমুল ফুল

আবু বকর ছিদ্দিক, বেলাব প্রতিনিধিঃ
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১ ৩:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নরসিংদী জেলার বেলাবতে ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে রাঙিয়ে ফুটছে শিমুল ফুল। যুগে যুগে শিমুল নিয়ে এমনি গান, গল্প কিংবা কবিতা লিখেছেন বলতে গেলে সব সাহিত্যিকই। বাংলাদেশের প্রায় সব অংশেই শিমুল ফুলের দেখামেলে। তার মধ্যে এ বসন্তে আমাদের প্রিয় নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার গ্রামের পথে প্রায়ই দেখা মেলে শিমুল ফুলের। গাছ ভর্তি লাল টকটকে ফুলের কোন সৌরভ না থাকলেও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন না এমন ব্যক্তি বোধহয় খুব কমই মেলে।

শুক্রবার ২৬ ফেব্রুয়ারী নরসিংদী জেলা বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া বাজার থেকে আগরপুরের দিকে আসতে বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন এর মধ্য দিয়ে বসে যাওয়া রাস্তার পাশে ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে মিলল বিশাল আকারের কয়েকটি ফুটন্ত ফুলের রক্তলাল শিমুল গাছ। আর শিমুলের সে সৌন্দর্য যে কোন পথচারিকেই দাড়িয়ে দেখতে বাধ্য করবে।

ঋতুরাজ বসন্তে এখন আর সব গাছের মত চোখে পড়ে না শিমুল গাছ। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। গাছে গাছে সবুজ পাতা, মুকুল আর ফুল আর কোকিলের ডাকে মনে করিয়ে দেয় বসন্তের আগমনী বার্তা। আম, কাঠাল, লিচু,লেবু ও বিভিন্ন ধরনের ফুল ও মুকুল, গাছের নতুন পাতা দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় দিয়ে এবার এলো ফাগুন, এলো বসন্ত। বাংলার প্রকৃতি থেকে এখন প্রায় বিলপ্তির পথে মূল্যবান শিমুল গাছ।

শিমুল আমাদের অত্যন্ত পরিচিত একটি ফুল। তাই শিমুল শব্দটা উচ্চারণ করলে সবার আগে এর রক্তরাঙা চেহারার কথাই মনে আসে। শিমুলের ইংরেজি নাম: Silk Cotton Tree. বাংলা সমনাম: শিমুল, রক্তশিমুল, লালশিমুল। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, এশিয়ায় এ গাছ প্রচুর জন্মে।লম্বায় প্রায় ১৫-২০ মিটার হয়। এর শাখা-প্রশাখা অপেক্ষাকৃত কম। সরল ও বৃত্তাকারভাবে চারদিকে বিস্তৃত। বাকলে কাঁটা থাকে। কাঁটার অগ্রভাগ সরু ও তীক্ষ্ণ এবং গোড়া বেশ মোটা।

পাতার গঠন অনেকটা বোঁটায় ছড়ানো হাতের পাঞ্জার মতো। এর পাতা ৭-১১ সেন্টিমটার চওড়া হয়। শীতের শেষে এই গাছের পাতা ঝরে যায়। ফাল্গুন মাসে ফুলের কুঁড়ি আসে এবং চৈত্র মাসে বড় এবং উজ্জ্বল রঙের লাল ফুল ফোটে। এরপর গাছের পাতা গজানো শুরু হয়। ফুলের পাপড়ি ১০-১২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর পুংকেশের অনেক থাকে। এর স্ত্রীকেশর পুংকেশর অপেক্ষা লম্বায় বড় হয়।

এর মোচাকৃতি ফল হয় এবং বৈশাখ মাসে ফল পাকে এবং ফল ফেটে বীজ ও তুলা বের হয়ে আসে। বীজের রঙ কালো। শিমুল তুলা লেপ, তোষক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই গাছ অন্তত পাঁচটি প্রজাতির পাওয়া যায়। এগুলো হলো-রেশমি শিমুল, লাল শিমুল , কাপোক শিমুল , পাহাড়ি শিমুল ,মোজাম্বিক শিমুল।

শিমুল বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলার মাঠে-ঘাটে, রাস্তার পাশে অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠে শিমুল গাছ। সাধারণত বর্ষাকালে পানি পেলে জন্মায়। দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে উচ্চতায় আশপাশের আম-কাঁঠাল জাতীয় ২০-২৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরে ৬ মাস সবুজ পাতায় সুশোভিত থাকে শিমুলগাছ।

হেমন্তের শুরতেই সবুজ পাতা হলদেটে হয়ে যায়। শীতের শুরুতেই সব পাতা ঝরে গাছ পুরোপুরি ন্যাড়া হয়ে যায়। বসন্ত কালেঅন্যান্য বৃক্ষরা যখন নব পল্লবে সেজে ওঠে তখন শিমুল গাছে শুধু কুঁড়ি বের হয়। সেই বোধহয় ভালো। নইলে শিমুলের পাতার যে সৌন্দর্য, সেটা এর ফুলের কাছে একেবারে ফিকে হয়ে যেত। আবার উল্টো ঘটনায় ঘটতে পারত।

শিমুলের পাতার যে বাহার, যে বিপুল তাদের সংখ্যা, হয়তো তার আড়ালে কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যেত শিমুলের সুন্দরী পষ্পকূল।শিমুল দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ। তাই এর কাণ্ডের বৃদ্ধিটাই সবচেয়ে বেশি। শিমুলের কাণ্ডের রং ধূসর।

অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে ফোঁড়ার মতো কাঁটা থাকে। কাণ্ড পেরিয়ে যতই ওপরে ওঠা যায় যায়, ততই কাঁটা
কমতে থাকে। কাণ্ডের শেষ পর্যায়ে গিয়ে মোটেও কাঁটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর ডালে তো নয়ই।

যাই হোক কোন গাছের বয়স ১৫-২০ পেরিয়ে গেলে কাঁটা তখন গোড়াতেও থাকে না। শিমুলে কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা বেশ নরম। তবে কাণ্ড একেবারে সোজা ও খাড়া হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়।

শিমুল গাছের কাণ্ড খাদযুক্ত। তারমানে কাণ্ডের একেবারে গোড়ার দিকে হাঙরের ডানার মতো ৩-৪ টি পায়া বের হয়ে মাটির সাথে মিশে যায় ।

একারণে বয়স্ক শিমুল গাছের কাণ্ড গোল হয় না। তবে তরুণ গাছের কাণ্ড গোলই হয়। ছোট্টকালে কাণ্ডের গোড়া থেকে ডাল বের হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেসব নষ্ট হয়ে যায়। তাই শিমুল গাছের কাণ্ডের উচ্চতাও অনেক বেশি। মোটমুটি ২০ ফুটের ওপরে গিয়ে শিমুলের প্রথম ডালটার নাগাল পাওয়া যেতে পারে।

কাণ্ডের বেড় শেষ পর্যন্ত কত হতে পারে, তা আমার জানা নেই।শিমুল পাতার রং সবুজ। বোঁটা লম্বা, বহুপক্ষল। একেকটা বোঁটায় ৫-৮ টা পাতা থাকে। প্রতিটা পাতার যে আলাদা বোঁটা থাকে, সেটা মোটামুটি এক ইঞ্চি লম্বা। পাতা লম্বাটে, অনেকটা বর্শার ফলার মতো। পাতা ৪-৮ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। মাঝ বরাবর পাতার প্রস্থ ২-২.৫ ইঞ্চি।

শীতের একেবারে শেষভাগে এসে ন্যাড়া শিমুল গাছের মঞ্জরিতে কুঁড়ি আসে। এর কুঁড়িগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। ঠিক কুঁড়ি নয়, যেন সুস্বাদু ফল! শিমুলের মঞ্জরিও দেখার মতো। ছোটখাট একট ডাল যেন। ডালটার সারা গায়ে সার বেঁধে কুঁড়ি বের হয়। তার মানে মঞ্জরি বহুপুষ্পক। ফুলের কুঁড়ি আস্ত একটা সবুজ আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। ধীরে ধীর সবুজ আবরণ ফেটে বেরিয়ে আসে আসল ফুল। কিন্তু কুঁড়ির ওই সবুজ আবরণ থেকেই যায়। পরিণত হয় সবুজ পাঁপড়িতে। ফুলের বোঁটার বেড় প্রায় ১ ইঞ্চি।

শিমুল ফুলের রং গাঢ় লাল। কখনো কখনো ফিকে লাল রঙের ফুলও দেখা যায়। শিমুল ফুল ঘন্টাকৃতির। পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। পাঁপড়ি ঘন, সুসজ্জিত। ফুলের ব্যাস ৫-৭ ইঞ্চি হতে পারে। একটা পাঁপড়ি ছিঁড়ে নিয়ে মাপলে কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি লম্বা হবে। পাঁপড়ি বেশ পুরু। অন্তত কাচের চায়ের কাপের মতো পুরু হবে। অতিরিক্ত পুরুত্বের কারণে শিমুল ফুলের ওজনও অনেক বেশি। একেকটা ফুলের ওজন ৩০-৫০ গ্রাম হবে। আমি মনে করি, শিমুলই একমাত্র বৃক্ষ যার ডাল ফুলের ভারেই নুয়ে পড়ে।

গ্রামে শিমূল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষ ফোঁড়া,যৌন রোগ ও কোষ্ঠ কাঠিণ্য নিরাময়ে গাছের মূলকে ব্যবহার করতো। বর্তমানে নানা কারণে তা হ্রাস পেয়েছে। এখন আর শিমুল গাছ কেউ রোপণ করেনা। শিমুল গাছ এমনিতেই জন্মায় তা দিনে দিনে বড় হয়ে একদিন বিশাল আকৃতি ধারণ করে। এই শিমূল গাছ অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি এনে দিত গ্রাম বাংলার মানুষের । গ্রামের মানুষেরা এই শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করতো। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোষক, বালিশ। শিমুলের তুলা বিক্রি ও করা যায়।

কিন্তু বেলাবতে বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছের। প্রতিনিয়ত বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ। যার কারণে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, অতি চিরচেনা শিমূল গাছ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।