মাঘ মাসের শেষ দিন আজ। ৩০ মাঘ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শনিবার) ফাল্গুনের শুরুটায় গাছে গাছে দেখা যায় নানান ফুলের সমাহার। গাছের শাখায় নতুন পত্র -কুড়ি নতুন ফুল। ফাল্গুন এলেই বাংলার পত্রহরিৎ অরণ্যে নতুন এ পত্র কুড়ি দেখা যায়। যা বাংলার প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্র। নতুন ফুলে ফলে ভরে ওঠে গাছের শাখা। তাই মাঘের শেষের দিকেই গাছে গাছে ফুটে উঠেছে আমের মুকুল।
অপরূপ বাংলার গাছে গাছে আমের মুকুলের এ চিত্র এমন কোনো মানুষ নেই যার মন ভোলাই না। আম গাছের ছোট ছোট সবুজ পাতার মাঝে হলদেটে মুকুল ঝুরি যেন কনক প্রদীপ হয়ে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই মুকুল ঝুরি গুলো প্রস্ফুটিত হবে মুকুল মঞ্জুরীতে। আম গাছ গুলো সজ্জিত হবে সাদা বেগুনি ও হলদেটে ফুলের ফুলে পুষ্প রানী সাজে।গাছে গাছে মৌ মাছির গুঞ্জন আর মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে কেড়ে নেই অনেক প্রকৃতিপ্রেমিক’এর মন।
মাঘের শেষ দিনে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন আম গাছে নতুন মুকুল এসেছে।গাছে গাছে আমের মুকুল দেখেই মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় সুর করে পড়া ছড়া
আম পাতা জোড়া জোড়া, মারব চাবুক চড়বে ঘোরা।
আম ও আমের মুকুল বাংলার মানুষকে অদৃশ্য একটা আকর্ষণে কাছে টানে। যে কারণেই আমের মুকুল ও আম নিয়ে অনেক কবি লিখেছেন অনেক কবিতা ও তাদের কবিতায় স্থান পেয়েছে প্রকৃতির এ উপাদান টি।
বাংলাদেশ আম উৎপাদনে এখন অনেক এগিয়ে রয়েছে।২০১৮-১৯ অর্থবছরে হিসেবে অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে ৭ম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে আম গাছ নেই এমন বসতবাড়ি খুবই কম আছে। বিশেষ করে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার এমন কোনো বাড়ি নেই যে আম গাছ নেই । বাড়ি বাড়ি আম গাছ থাকা সত্ত্বেও মানুষকে বাজার থেকে আম কিনে খেতে হয়।
কৃষিবিদদের মতে, আম গাছের একটু পরিচর্যা করলেই প্রতিবছর নিজ বাড়িতে উৎপাদিত আম দিয়ে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি ও করা যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার এর পরামর্শ অনুযায়ী আশ্বিন – কার্তিক মাসে গাছের গোড়ায় কিছু জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মুকুল ধরার পূর্বে গাছের ডালের আগাগুলো যখন মোটা হয় তখন, গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করলে আম গাছের হপার পোকা ধ্বংস হয়। মুকুল ধরার পর মুকুল গুলি যখন প্রস্ফুটিত হয়, তখন কিছু হরমোন জাতীয় রাসায়নিক প্রয়োগ করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে।মুকুল থেকে আম গুটি ধরলে তখন হালকা কীটনাশক স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করলে প্যাডেল চালিত সরকারি মেশিন দিয়ে বড় বড় আম গাছে স্প্রে করা যাবে। কৃষি অফিসারদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেরা-ও বাড়িতে আম গাছে হরমোন ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে পারবে। বেলাব উপজেলার প্রত্যেক বাড়ি থেকে একজন যদি আগ্রহ নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার এর সাথে যোগাযোগ করে, তাহলে তারা সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলে প্রত্যেক বাড়িতে আমের চাহিদা মিটিয়েও বাজারে আম বিক্রয় করতে পারবে এবং আর্থিক ভাবে সফল হবে।