ঢাকারবিবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
১৭ই চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ৩১শে মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রশাসনের নাকের ডগায় টিকরপাড়া গ্রামে অবাধে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব, দেখার কেউ নেই।

Agrajatra 24
ডিসেম্বর ২৭, ২০২০ ২:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ  করেসপন্ডেন্টঃ-সিলেটের সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের টিকরপাড়া গ্রামে সরকারি পাহাড়ি টিলা পাতকী টিলা নামক স্থানে অবাধে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, দেয়াল নির্মাণের কথা বলে  ১০০-৮০ ফুট উঁচু টিলা কেটে মাটির শ্রেণি পরিবর্তন করে সমতল করছেন টিকরপাড়া গ্রামের মৃত.জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে দখল মালিক নাজমুল ইসলাম মুকুল। আর পাহাড় ও টিলা কাটা মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নিচু জমি এবং সরকারি পাহাড়ি টিলা কেটে অল্প কিছু মাটি রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ও অনেক উঁচু টিলা ছিলো। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর টিলার মাটি কেটে সেখানে এলোপাতাড়ি দেয়াল নির্মানের কাজ শুরু করেন। দেয়াল নির্মাণের কাজ কিন্তু এখন প্রায় শেষের দিকে। প্রকাশ্যদিবালোকে প্রশাসনের নাকের ডগায় ওই সরকারি পাহাড়ি টিলায় শুরু হয় মাটি কাটা ও নির্মান কাজ।

এদিকে পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও স্থানী থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

 এই ঘটনার সত্যতা জানার জন্য জনৈক সাংবাদিকের একটি টিম ঘটনা স্থলে পৌঁছালে, টিলা খেকো নাজমুল ইসলাম মুকুল কে পাওয়া যায় নি তবে প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েকজন লোক কে টিলা কাটাতে দেখা যায় এবং ওদের কাছে ওই টিলা কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ওরা জানায় যে, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না এই জায়গায় দখল মালিক নাজমুল ইসলাম মুকুলের সাথে কথা বলতে বলে।
এ বিষয়ে দখল মালিক টিলা খেকো নাজমুল ইসলাম মুকুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই জায়গা উনার বাপ-দাদার। উনার যা ভালো লাগবে উনি করবেন আর টিলা কাটতে উনি কারো কোন অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না। উল্টো তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন  এখানে আপনারা কেন গিয়েছেন?  সাংবাদিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে উনি বলেন, উনি কি পরিবেশে কাছ থেকে অনুমতি নিবেন উল্টো না কি পরিবেশ অধিদপ্তর কে উনার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টিলা খেকো নাজমুল ইসলাম মুকুল  রাজধানীর চকবাজার থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি করে মোট চারটি মামলার আসামী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমের ডাইবার বলে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। তার খুঁটির জোর কোথায়? কিসের  দাপটে সে প্রশাসনকে পরোয়া না করে এরকম এহেন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবিদ আব্দুল হাই আল হাদী জানান, সিলেটের উত্তর পূর্বাঞ্চল ভূতাত্তিক পাহাড়ি অঞ্চল। সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক উন্নয়নের কাজে ১৯৯৬ সালে পাহাড় ও টিলার, বিশাল অংশ বিলিন করে দেয়া হয়। বর্তমানে যে টিলাগুলো রয়েছে তা বিপন্ন হয়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড়কাটা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্প বা লাগাতার বর্ষণের সময় ভূমিধস হয়ে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে।তাই তিনি পাহাড় খেকোদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে ৮ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আব্দুল মছব্বিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ঐ ওয়ার্ডের ইউ/পি সদস্য ঠিক তবে এই বিষয়টা আইনের বিষয় আপনারা আইনানুগ ব্যবস্থা নিন আমার যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন তা আমি কারবো।
শাহপরান (র.) অন্তর্ভুক্ত সুরমাগেইট তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়া সাক্ষাতে জানান, এটা পরিবেশ অধিদপ্তরের বিষয়, এখানে উনারা কি করবেন। তাছাড়া ওদের ধরে নিয়ে আসলে কি লাভ হবে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর উনারা আসেন না। অন্য টিলা কাটার বিষয় নিয়ে বার বার সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে এখন উনারা এসব বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তারপরও যদি প্রকাশ্য দিবালোকে টিলা কাটা হচ্ছে এমন তথ্য পেলে উনি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, প্রকাশ্য দিবালোকে টিলা কাটা হচ্ছে উনাকে জনৈক সাংবাদিকরা তথ্য দিলে উনি দেখবো দেখছি বলে কাল-যাপন  করছেন।
এ বিষয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া মমতাজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কোন অভিযোগ এখনো পান নি, তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্তা নিবেন।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী-পরিচালক (কারিগরী) অফিসার সাক্ষাতে জানান,  এই বিষয় উনি কোন অভিযোগ পান নি তবে তিনি উক্ত বিষয়টি অবিলম্বে দেখবেন এবং টিলা খেকো নাজমুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রধান করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ভিতরে এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর মোবাইল কোর্ড ও ইনর্ফমেন্টস প্রক্রিয়াতে পরিবেশ রক্ষা অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন জায়গায় ৯০ লাখ ১৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রধান করেছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
 তাই স্থানীয়, সচেতন মহল সরকারি পাহাড়ি টিলা কাটা ও টিলা খেকো নাজমুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।