ইয়াছিন আলী-
আলহামদুলিল্লাহ। শুরু হয়ে গেলো রামাদ্বানের শ্রেষ্ঠ সময়। লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণে রামাদ্বানের শেষ দশক।
হাজার মাসের চাইতেও অধিক পূন্যময় রাত ‘লাইলাতুল ক্বদর’।
‘ক্বদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ’ (আল কোরআন-৯৭:০৩)।
ক্বদরের রাত কবে? কোনটি?
সে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:-
•‘‘রামাদ্বানের শেষ দশদিনে তোমরা ক্বদরের রাত তালাশ কর।’’ [বুখারী-২০২০; মুসলিম-১১৬৯]
•‘‘তোমরা রামাদ্বানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে ক্বদরের রাত খোঁজ কর।’’ [বুখারী-২০১৭]
•‘‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রামাদ্বানের শেষ সাত রাতের মধ্যে তা অন্বেষণ করে।’’ [বুখারী-২০১৫; মুসলিম-১১৬৫]
•উবাই ইবনে কাব হতে বর্ণিত- তিনি বলেন যে,
“আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে যে রজনীকে ক্বদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হল রামাদ্বানের ২৭তম রাত।” [মুসলিম-৭৬২]
আসুন, হাদিসগুলো আরেকবার খেয়াল করে একটু দেখে নেই। এবার ১০০% নিশ্চিত করে কি বলতে পারবো যে, শুধুমাত্র ২৭শে রাতটাই হচ্ছে ‘নিশ্চিত লাইলাতুল ক্বদর’?
যদি তা না হয়, তাহলে ক্ষতিটা কার?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে যেন রামাদ্বানের শেষ দশরাতে না হলেও, “অন্ততপক্ষে” (কম করে হলেও) রামাদ্বানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ক্বদরের নিয়ামত তালাশ করার উপলব্ধি ও সহীহ বুঝ দান করুন।
কেউ যদি #কদরের_রাতে আমল করতে চান, এই নিয়মে করতে পারেন…
১। রাত দশটার পর থেকে টিভি বা মোবাইল দেখা থেকে বিরত থাকুন।
২। বেশি গরম লাগলে গোসল করুন ও পরিষ্কার পোষাক পরিধান করুণ।
৩। কোরআন পড়তে পারলে ১২ টার আগ পর্যন্ত কোরআন পরুন।
৪। বেশি বেশি নফল আর হাজতের নামাজ পড়ুন।
৫। রাত ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত জিকির করুন। যেমনঃ-
(১) সুবহানাল্লহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লহু আকবার। (১০০ বার করে)
(২) লা ইলাহা ইল্লাল্লহ (২০০ বার)
(৩) আস্তাগফিরুল্লহ (কমপক্ষে ৫০০ বার, যত বেশি সম্ভব হয়)
(৪)বেশী বেশী দুরুদ পড়া।
(৫) সুবহানাল্লহি ওয়াবিহামদিহি (কমপক্ষে ১০০ বার)
(৬)”লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়্যিন কদির” (কমপক্ষে ১০০ বার)
(৭) দুয়া ইউনুস – “লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যলিমীন” ।(যত পারেন)
(৮)”সুবহানাল্লহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লহিল ‘আযীম।” (কমপক্ষে ১০০ বার) ।
(৯) “লা হাওলা ওয়ালা কুওওতা ইল্লা বিল্লাহ” বেশি বেশি পড়তে পারেন।
(১০) সূরা ইখলাস যত বেশি পড়া যায়।
(১১) স্যায়েদুল ইস্তগফার পাঠ করা।
৬। রাত ২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত তাহাজ্জুদ পরুন ৮ রাকাত। রুকু ও সিজদায় বেশি সময় ব্যয় করুন।পারলে সিজদায় দোয়া করা।
৭। তাহাজ্জুদের পর তিন রাকাআত বিতরের নামাজ পরুন।
৮। সেহরি খাওয়ার পূর্বেই হাত তুলুন মালিকের কাছে। আপনার প্রয়োজনের সব কিছু খুলে বলুন..একটু চোখের পানি ফেলে বলুন, “মালিক, আমি আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই হাত পেতেছি…😭 খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না…..ইত্যাদি…
৯। সেহরি খান।
১০। ফজরের নামাজ পড়ুন।
উপরের কথাগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন, যারা আপনার কথা শুনে এ আমল করবে, আপনিও তাদের আমলের সমান সাওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ্।
.
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী আমলকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, কিন্তু আমলকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না।…” [মুসলিম ২৬৭৪]
রমজানের শেষ দশ দিনের মধ্যে যে কোন দিন শবে কদর হয়ে যেতে পারে। তাই শবে কদরের রাত মিস করতে না চাইলে, বিশেষ করে বিজোড় রাতে এই আমল গুলো করুন।
আল্লাহ্ আমাদের আমল করার তৌফিক দিন।আমিন।
আমার খুব মনে হচ্ছে আজকেই শবে কদরের রাত! আল্লাহ ভাল জানেন।এমনিতেও বিজোড় রাতগুলো যেন হাতছাড়া না করি ইনশাআল্লাহ! যে রাত লাইলাতুল কদর হবে , সে রাতের কিছু আলামত হাদীসে বর্ণিত আছে। সেগুলো হল –
(১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
(২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
(৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
(৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
(৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
(৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
(৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
(সহীহ ইবনু খুযাইমাহ : ২১৯০ ; বুখারী : ২০২১ ; মুসলিম : ৭৬২)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ রমযানের শেষ দশ দিনে এতে-কাফ করতেন এবং বলতেন, “তোমরা রমযানের শেষ দশকে শবে কদর অনুসন্ধান কর।” রিয়াদুস স্বালেহীন ১১৯৯। সহীহুল বুখারী ২০২০, ২০১৭, মুসলিম ১১৬৯,