লেখক:মোঃ আনোয়ার হোসেন,
বিপিএম(বার)পিপিএম(বার)
ডিআইজি, চট্টগ্রাম-রেঞ্জ
আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই তারিখে বিকেল চারটায় মিত্রবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টাঙ্গাইলে ভারতীয় ছত্রী সেনাদল অবতরণ করে। পুরো এক প্যারা ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যখন আকাশ থেকে নেমে আসছিল তখন সেটা দেখার মত দৃশ্য হয়েছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো আকাশ প্যারাসুটে ভরে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি দেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মানসিকভাবে আরো বেশি ভেঙ্গে পড়েছিল।
এই তারিখে বিদেশি নাগরিকদের স্থানান্তরের সুবিধার্থে জাতিসংঘের অনুরোধে ঢাকা বিমানবন্দরে, বিমান হামলা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। পাক বাহিনীর সদস্যরা অনেকেই ভয়ে আতঙ্কে বাহিনীর পোশাক ছেড়ে সাধারণ পোশাক পড়ে পালাতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েছিল।
অপরদিকে মার্কিন প্রশাসনের কেন্দ্রে এবং জাতিসংঘে চলছিল আন্তর্জাতিক কূটনীতির আরেক খেলা। দুবার সোভিয়েত ভেটোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সাধারণ পরিষদে বিবেচনার জন্য পুনরায় উত্থাপিত হয়েছিল।
১০৪ ভোট বনাম 11 ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। যেহেতু সাধারণ পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রতিপালনে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না তাই এর কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না।
কিন্তু বিষয়টি পুনরায় ফিরে আসে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। এই যাত্রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ভেটো প্রদান করা ছিল কঠিন। কাজেই চেষ্টা চলছিল আলোচনা দীর্ঘায়িত করার। অন্যদিকে পর্দার অন্তরালে চলছিল চীন-মার্কিন আঁতাতের রাজনীতি।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানোর জন্য উভয়ের মধ্যে চলছিল নানা পাঁয়তারা।
সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মিত্রবাহিনীর অকুতোভয় সৈন্যরা রাজধানী ঢাকার একেবারে নিকটবর্তী স্থানে চলে এসেছিল। দেশের অধিকাংশ স্থান শত্রু মুক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষও বিজয়ের আনন্দের অপেক্ষায় ছিল।